বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য সেবা খাতের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান থেরানোসের প্রতিষ্ঠাতা এলিজাবেথ হোমস। এর জেরে এই প্রতারককে শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) ১১ বছর তিন মাসের জেল দিয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি আদালত। খবর বিবিসির।
প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যমটি জানায়, এলিজাবেথ হোমসকে তার রক্ত পরীক্ষা স্টার্টআপে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে ১১ বছরেরও বেশি জেল দেওয়া হয়েছে।
এক সময় হোমসের প্রতিষ্ঠান থেরানোসের বাজার মূল্য ছিল ৯০০ কোটি ডলার।
৩৮ বছরী হোমস বর্তমানে অন্তঃসত্ত্বা। রায়ের পর কেঁদে তিনি আদালতকে বলেন, ‘যারা বিষয়টিকে বিভ্রান্ত করেছে তাদের জন্য আমি গভীরভাবে ব্যথিত। ’
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ঝরে পড়ার পর মাত্র ১৯ বছর বয়সে হোমস থেরানোস প্রতিষ্ঠা করেন। স্বাস্থ্য খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাত্রা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। ওই সময় কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ করেন মিডিয়া ম্যাগনেট বলে পরিচিত রুপার্ট মারডক, প্রযুক্তি বিষয়ক মুঘল বলে পরিচিত ল্যারি এলিসনসহ অনেক হাই প্রোফাইল। এক সময় সিলিকন ভ্যালিতে থেরানোসের আর্থিক মূল্য দাঁড়ায় ৯০০ কোটি ডলার।
হোমস দাবি করেছিলেন, তার প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি মাত্র এক ফোঁটা রক্ত দিয়েই ক্যান্সার, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগ ধরতে পারবে। তবে ২০১৫ সালে রক্তের মাধ্যমে রোগ নির্ণয়ের প্রযুক্তি অকার্যকর জানিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। এরপরই তার প্রতিষ্ঠানে ধস নামে। ২০১৮ সালে বন্ধ হয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটি।
তিন মাসের বিচারের পর জানুয়ারিতে হোমসকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
বিবিসি বলছে, ক্যালিফোর্নিয়ার আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন হোমস। প্রযুক্তি খাতে কর্পোরেট জালিয়াতিকে কতটা গুরুত্ব সহকারে নেয় বিচার বিভাগ, তার জন্য সাজাটি ব্যাপকভাবে দেখা হচ্ছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার সান জোসে হোমসের বিচারে প্রসিকিউটররা বলেন, থেরানোসের প্রতিষ্ঠাতা জেনেশুনে ডাক্তার ও রোগীদের বিভ্রান্ত করেছেন। আর্থিক লাভবানের জন্য নিজের প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে অতিরঞ্জিত কথা বলেছেন তিনি।
বিচারক এডওয়ার্ড ড্যাভিলার আদালতে রায়ের আগে নিজের সাফাই গেয়ে কথা বলেন হোমস। এ সময় অশ্রুসিক্তভাবে বিনিয়োগকারী ও রোগীদের কাছে ক্ষমা চান তিনি।
হোমস বলেন, ‘আমি আমার ব্যর্থতায় বিধ্বস্ত। যারা আমার ওপর ভরসা করেছিল তাদের জন্য গভীরভাবে ব্যথিত, কারণ আমি ব্যর্থ হয়েছি। আমি আমার শরীরের প্রতিটি কোষের সঙ্গে আমার ব্যর্থতার জন্য অনুতপ্ত। ’
পরে বিচারক এডওয়ার্ড হোমসকে উজ্জ্বল উদ্যোক্তা হিসেবে উল্লেখ করেন এবং তাকে উদ্দেশে করে বলেন, ‘ব্যর্থতা স্বাভাবিক। কিন্তু জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যর্থ হওয়া ঠিক নয়। ’